ধুলায় ধূসর রামু কলেজ গেইট, দুর্ভোগ পথচারী ও শিক্ষার্থীদের

শাহীন মাহমুদ রাসেল :

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পাশে রামু উপজেলায় গড়ে ওঠা একাধিক ইটভাটায় দেদারছে মাটি পরিবহন করায় প্রায় ৩ কিলোমিটার সড়ক ধুলায় ধূসরিত হয়ে পড়েছে। ইটভাটার ধুলা, কয়লা রাস্তায় পড়ে পুরু হয়ে গেছে। সড়ক দিয়ে যান চলাচল করলে ধুলায় অন্ধকার হয়ে যায় চারদিক। আশপাশের সবুজ গাছও বিবর্ণ হয়ে গেছে। শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ রাস্তা পাড়ি দিলে তাদের চেহারা চেনার উপায় থাকে না। এতে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ পথচারীদের দুর্ভোগ চরমে উঠেছে।

এছাড়াও যত সব ভাটার মাটিও পরিবহন করা হয় এই সড়ক দিয়ে। প্রতিদিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত প্রায় ২০০টি ডাম্পা এবং মাহিন্দ্র ট্রাক্টরযোগে সদর এবং রামু এলাকার বিভিন্ন গ্রাম থেকে মাটির উর্বর অংশ কেটে আনা হচ্ছে।

মৌসুমের শুরু থেকে এ প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। বিশেষ করে, রামু কলেজ, রামু টেক্সটাইল স্কুল এন্ড কলেজ, আবুবক্কর ছিদ্দিক বালিকা মাদ্রাসার সামনে দিয়ে এবং কলঘর বাজারের উপর দিয়ে বেপরোয়া গতিতে ডাম্পার এবং মাহিন্দ্র ট্রাক্টরগুলো মাটি পরিবহন করে আসছে।

এতে ট্রাক্টরের ধুলো-মাটিতে সারা রাস্তা ধুলোয় ধূসরিত হয়ে পড়ছে। ধুলোর কারণে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এছাড়াও পথচারীদের মারাত্মক ঝুঁকিতে চলাচল করতে হচ্ছে। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার এ সড়কে পর্যটক, দেশের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারকরা এই রোড় দিয়ে চলাচল করে, তা’ছাড়া বাস, ট্রাক, মোটরসাইকেল, সাইকেল, ইজিবাইকসহ বিভিন্ন প্রকারের লক্ষ লক্ষ গাড়ি চলাচল করে। এসব গাড়িতে থাকা যাত্রী ও চালকরা ধুলোর কবলে পড়ে চোখ বন্ধ করে চলাচল করতে গিয়ে প্রায় সময়ে দুর্ঘটনায় পতিত হচ্ছে।

এছাড়াও মাটি পরিবহনকারী ডাম্পার এবং মাহিন্দ্র ট্রাক্টরগুলো ফুয়ার চর হতে এন আলম পেট্রোল পাম্পের সামনে দিয়ে কৃষি জমির উপর দিয়ে এসে পাকা সড়কে উঠছে। ওই রাস্তার একপাশে বাড়ি এবং অপরপাশে একটি বাগান থাকায় পাকা সড়কে চলাচলকারী গাড়িগুলো ওই মহাসড়ক আসা ডাম্পার এবং মাহিন্দ্র ট্রাক্টরকে দেখতে না পেয়ে প্রায় সময়েই দুর্ঘটনা ঘটছে।

এ ব্যাপারে কলঘর আবুবক্কর ছিদ্দিকা বালিকা মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক জানান, মাদ্রাসার আধা কিলোমিটারের মধ্যে কয়েকটি ইটভাটা। এ ভাটাগুলি মাটি পরিবহনের পাশাপাশি ভাটা থেকে ইট পরিবহন করা হয় বিভিন্ন গ্রামে। এ কারণে মাদ্রাসা সংলগ্ন রাস্তাটি সবসময় ধুলোয় অন্ধকার থাকে। ধুলোর কারণে শিক্ষার্থীদের জামা-কাপড় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তাই শিক্ষার্থীরা মাদ্রাসায় ঠিকমতো আসছে না।

রামু কলেজ অধ্যক্ষ আব্দুল হক জানান, কলেজে শিক্ষার্থীরা সাইকেল ও পায়ে হেঁটে কলেজে যাতায়াত করে। কিন্তু কলেজের পাশের রাস্তা দিয়ে বেপরোয়া গতিতে ইটভাটায় মাটি পরিবহন করায় রাস্তাটি সবসময় থাকে ঝুঁকিপূর্ণ। এ কারণে শিক্ষার্থীরা ঠিকমতো কলেজে আসতে ভয় পাচ্ছে।

সাত ঘরিয়া এলাকার বাসিন্দা রেজাউল ইসলাম জানান, এই এলাকায় রামু কলেজের সামনে কিছু ডাম্পার ও মাহিন্দ্র মাটি নিয়ে হঠাৎ পাকা রাস্তায় উঠে পড়ে। এ কারণে সেখানে অহরহ দুর্ঘটনা ঘটছে।

কলঘর এলাকার বাসিন্দা হানিফ বলেন, এন আলম পেট্রোল পাম্পের সামনে ফুয়ার চর থেকে ভাটার কাঁচামাল হিসেবে কয়েকটি মাহিন্দ্র ট্রাক্টর করে আবাদি জমি হতে মাটি কেটে আনা হচ্ছে। এ কারণে সারারাস্তা ধুলোয় আচ্ছন্ন থাকছে সারাক্ষণ। তাছাড়া ভাটার মাটির ঢিবি রাস্তা সংলগ্ন করায় মাহিন্দ্র গাড়ির দাপটে ঠিকমতো চলাচল করা যায় না।

রামু ডিগ্রি কলেজের শিক্ষকরা জানান, চাকরির কারণে সবসময় মোটরসাইকেলে করে রামুতে যাতায়াত করতে হয়। কিন্তু এলাকায় গড়ে ওঠা ইটভাটার ধুলোয় ঠিকমতো চলাচল করা যায় না। তারপরও দুর্ঘটনার আশঙ্কা তো আছেই। তাই পথচারীদের নিরাপদ চলাচলের জন্য বাড়ি ইটভাটা অপসারণের দাবি জানান তিনি।

এ ব্যাপারে ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন সড়কের পাশে ভাটা স্থাপনের কথা স্বীকার করে বলেন, শুধু একটি ইটভাটা নয় আরো কয়েকটি ভাটার মাটি পরিবহন করা হয় ওই সড়ক দিয়ে, রাস্তার ধুলোবালিতে পথচারীদের চলাচলে যাতে অসুবিধা না হয় সেজন্য মাঝে মাঝে পানি দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে ইটভাটা মালিকদের। তাছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ কলঘর এবং রামু কলেজ এলাকায় একজন লোক নিয়োগ দেওয়ার কথা। ওই ব্যক্তি সারাদিন ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করবেন যাতে পথচারীদের দুর্ঘটনায় পড়তে না হয়।

এ ব্যাপারে রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লুৎফর রহমান জানান, পথচারী কিংবা ছাত্রছাত্রীদের চলাচলে অসুবিধার বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।